শিরোনাম :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালু গোদাগাড়ীতে মজুত করাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের দৌঁড়-ঝাঁপ গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার!
ভুয়া সাংবাদিক ইমদাদের দাপটে অতিষ্ঠ রাজশাহীবাসী

ভুয়া সাংবাদিক ইমদাদের দাপটে অতিষ্ঠ রাজশাহীবাসী

ভুয়া সাংবাদিক ইমদাদের দাপটে অতিষ্ঠ রাজশাহীবাসী
ভুয়া সাংবাদিক ইমদাদের দাপটে অতিষ্ঠ রাজশাহীবাসী

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে ব্যাঙ এর ছাতার মতো চারিদিকে গড়ে উঠেছে রকমারি নামের অনলাইন ডটকম পত্রিকা। এদের মধ্যে অনেকেরই নেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। আবার এসব অনলাইনে অনেকেই যুক্ত মাদক ব্যবসার সাথে। রাজশাহীতে তেমনই একজন ভুঁইফোড় সাংবাদকি ইমদাদ। যার চাঁদাবাজি, প্রতারণা, হয়রানি ও ভুয়া অনলাইন পত্রিকার দাপটে তটস্থ রাজশাহীবাসী। তার বিরুদ্ধে রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় রয়েছে ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ প্রায় ডজন খানেক অভিযোগ ও মামলা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অক্ষরজ্ঞানহীন এই ভুঁইফোঁড় সাংবাদিক দূর্গাপুরে গরু চুরি করতে তার বাবা সহ দুইভাই এলাকায় গণপিটুনি খেয়ে এলাকা ছাড়া হয়। এলাকায় সে গরুচোরা ছেলে নামে পরিচিত। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন হওয়ায় বাধ্য হয়েই এলাকা ছাড়া হয় তারা। পরে রাজশাহী এসে আস্তানাগাড়ে সে ও তার ভাই রেজাউল।

রাজশাহী এসে সংবাদ চলমান নামে একটি অনলাইন পোর্টাল খুলে রাজশাহীজুড়ে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের কাছে কার্ড বিক্রি শুরু করে। রাজশাহীজুড়ে প্রতিটি চিহ্নিত মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী ও অশিক্ষিত সন্ত্রাসীদের কাছে টাকার বিনিময়ে কার্ড বিক্রি করেছে ভুঁইফোড় অনলাইন পত্রিকা সংবাদ চলামান ডটকমের কথিত এই সম্পাদক। শুধু তা নয়, সাংবাদিকতার সুযোগ দেওয়া হবে বলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছে থেকেও মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই ভুঁইফোড় সাংবাদিক।

ইমদাদের কাছে প্রতারিত হওয়া এমনই এক ভুক্তভোগী হলেন মো. ইশতিয়াক আহমেদ পল্লব। ইশতিয়াক জানায়, এক ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচয় হয় ইমদাদুল হকের সাথে। কথা ছিল ৫ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হবে। পরে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আমাকে সংবাদ চলমানে কাজ দিবো বলে ১০ হাজার টাকা চান। আমিও বিশ্বাস করে দিয়ে দেই। কিন্তু কোন কাজ না দিয়েই সে দিনের পর দিন আমাকে ঘোরাতে থাকে। কিন্তু তার পত্রিকার কার্ড কিংবা সাংবাদিকতার সুযোগ কোনটায় দেননি তিনি। টাকা ফেরত চাইতে গেলে আমাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংবাদিক জানান, সে শুধু চাঁদাবাজই নয়, বরং একজন সন্ত্রাসীও। দূর্গাপুরে থাকতে সে সর্বহারা চরমপন্থী দলের সদস্য ছিল। গরু চুরি ও ডাকাতির মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় এলাকা ছাড়া হয় ইমদাদ ও তার ভাই। রাজশাহী বোয়ালিয়া মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে দূর্গাপুর উপজেলার সন্ত্রাসীদের তালিকায় সে দুই নাম্বার আসামী। বোয়ালিয়া মডেল থানায় সে সর্বহারা চরমপন্থী হিসেবে চিহ্নিত। এছাড়াও তার ভাই রেজাউলের সাথে গোপনে মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত।

তিনি আরও জানান, নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য তৈরি করেছেন ভুঁইফোড় কার্ডধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ। এদের দিয়ে সাধারণ মানুষসহ পুলিশ প্রশাসনেও ভয়ভীতি ও হুমকিধামকি চালান ইমদাদ। আবার সাংবাদিকতার প্রলোভন দিয়ে অনেক নারীকে ব্যবহারও করে ইমদাদ। বিভিন্ন অর্থবিত্ত সম্পন্ন ব্যক্তিদের নারীর প্রলোভন দেখিয়ে ছবি ও ভিডিও দিয়ে করে ব্ল্যাকমেইল।

শুধু শিক্ষার্থী-ই নয়, সাংবাদিকতার সুযোগ দেওয়া হবে বলে অনেক মেয়েকে চরিত্র হননও করেছে ইমদাদুল হক ওরফে গরুচোরা ইমদাদ। জানা গেছে, সংবাদ ২৪ ঘন্টার সাংবাদিক মো. রাকিবুজ্জামান রকির স্ত্রীকে সাংবাদিকতার প্রলোভন দিয়ে সংসার পর্যন্ত তছনছ করে দেয় ইমদাদ। এমনকি সাংবাদিক রকির সংসারে সুকৌশলে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে প্রতারণার মাধ্যমে তার স্ত্রীকে সংবাদ চলমানে কাজের সুযোগ দেয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই অশালীন আচরণ ও কুপ্রস্তাব দেওয়ায় সাংবাদিক রকির স্ত্রী ইমদাদের অনলাইন পোর্টালে কাজ ছেড়ে দেয় এবং কাশিয়াডাঙ্গা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

ইমদাদের চাঁদাবাজির তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, তৎকালীন পুঠিয়া থানার এসআই বজলুর রহমানের কাছে জোরপূর্বক চাঁদাদাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যে সংবাদ প্রকাশ করা হবে বলেও হুমকি প্রদান করেন। পরে তিনি নিজ থানায় তার নামে একটি মামলা দায়ের করেন। তার কিছুদিন পরই দূর্গাপুরের শালঘরিয়ার ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান লিটনের বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ২০ অক্টোবর আরেকটি মামলা দায়ের হয়। অন্যদিকে, রাজশাহী রেলওয়েতে চাকরিরত রফিকুল ইসলামের স্ত্রীর কাছে ভয়ভীতি ও চাঁদাদাবি করেন। এনিয়ে ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর বোয়ালিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও ডজন খানেকের মতো মামলা রয়েছে তার নামে।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, সে কখনও ম্যাজিস্ট্রেট, কখনও র‌্যাব, কখনও ডিবি পুলিশ, কখনও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবার কখনও বড় টিভি কিংবা পত্রিকার সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে শহর ও নগরের বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেন। ধরা পড়লে হাত-পা ধরে মাফ চেয়ে পালিয়ে আসে।

এবিষয়ে সুশীল সমাজের কিছু ব্যক্তি বলছেন, সাংবাদিকতার মতো মহান পেশা যদি অশিক্ষিত, সন্ত্রাসী ও মাদকসেবী তথা মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যায় সেক্ষেত্রে এই পেশাটি কুলষিত হওয়া স্বাভাবিক। বর্তমানে যে কেউ সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে দাবি করছেন। যিনি সাংবাদিকতার ধারা, নীতি-নৈতিকতার কিছুই জানেন না, এমনকি যার শিক্ষাগত যোগ্যতা পর্যন্ত নেই তারাও আজ সাংবাদিক হিসেবে দাবি করেন যা সত্যিই খুব লজ্জাজনক। সাংবাদিকতার মতো এই মহান পেশাকে রক্ষা ও অপসাংাবদিকদের এই পেশা থেকে অপসারণ করলেই এই পেশার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। অন্যথায়, ম্লান হয়ে যাবে এই মহান পেশা।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply